আমরা কিভাবে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে আপনাদের তথ্য দেই? মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হবেকি ?
আপনাদের এখনকার কমন প্রশ্ন, “মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হবেকি ?, জিএফএস ঘূর্ণিঝড় দেখাইছে আবার ঘূর্ণিঝড় হাওয়া করে দিয়েছে, আবার দেখাচ্ছে, অথচ আমরা কেন কিছু বলছিনা কেন? আমরা কেন কোন উত্তর করছিনা? সাইক্লোনের শক্তি , সাইক্লোনের ল্যান্ডফলের স্থান ইত্যাদি।
এখন আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে আসি। মূলত আমাদের রিসার্চ টিম যে বিষয়গুলিতে একমত হয় আমরা সেই মতগুলিই উল্লেখ করে থাকি। গুরুত্বপূর্ন আপডেটের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে যথাযথ কনফিডেন্স না পাওয়া পর্যন্ত তা আমরা তা উল্লেখ করিনা।
আমাদের ব্যাপারে একটা কথা সুস্পষ্ট করি তা হলো, আমরা “মডেল ম্যান” না। অর্থাৎ আমরা মডেল দেখেই বলে দেইনা যে কোন ইভেন্ট হবে নাকি হবেনা, সাইক্লোন হবে নাকি হবেনা। বরং আমরা সাইক্লোন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্যারামিটারসমূহ বিশ্লেষন করি।
তার পরে আমাদের টিমের সবাই কনভিন্সড হলেই সেটার ডিটেইলস আপডেট করি। জানি আমাদের বিশ্লেষন সর্বদা ১০০% একুরেসি পায়না, তাও আমরা চেষ্টা করি নিখুত করার। এমনকি আমরা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার আবহাওয়া বিষয়ক গবেষকের সাথে জ্ঞান বিতরনের উদ্দেশ্যে কিছু কাজ করার চেষ্টা করছি, যাতে পারস্পারিক জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের ভুলগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে পারি এবং আপডেটগুলোকে আরো নিখুত করতে পারি।
মে মাসের সম্ভাব্য ঘূর্নিঝড়ের ব্যাপারে আমাদের মতামত কি? মে মাসে ঘূর্ণিঝড় হবেকি ?
আমরা বঙ্গোপসাগরে মে মাসের সম্ভাব্য সাইক্লোন ফরমেশনের ব্যাপারে আমাদের ফাইসবুক পেইজে ৬টি প্রি-আপডেট দিয়েছি। এমনকি একটা পত্রিকাতেও আমাদের প্রাপ্ত সম্ভাবনার কথা জানিয়েছি। কোন আপডেটেই সিস্টেম ফর্মেশন এর সময় ও পরিবেশের অবস্থা সম্পর্কে বার বার পরিবর্তিত মতামত প্রকাশ করিনি। অর্থাৎ আমাদের এপ্রিল এর ২৩ তারিখ হতে এখন পর্যন্ত যে ৬টি প্রি আপডেট দেওয়া হয়েছে তার মূল বক্তব্য প্রায় একই রকম রয়েছে।
আপনাদের আরো অল্প একটু সময় লাগবে মোটামুটি নিখুত একটা আপডেট পেতে।
আপনাদের অনেকে ভাবেন যে, প্রচুর তাপমাত্রা হলে বুঝি ঘূর্ণিঝড় হয়ে যাবে, তাই বৃষ্টির কারনে তাপপ্রবাহ শেষ হয়ে তাপমাত্রা কমে গেলে গেলে আর সাইক্লোন হবেনা। আবার কয়েকদিনধরে কিছুটা গরম পড়ছে, একটানা বৃষ্টি পড়ছেনা বিধায় এখন ভাবছেন, সাগরে প্রচুর এনার্জি স্টোর হয়ে আছে তাই ঘূর্ণিঝড় অবশ্যম্ভাবী। আবার অনেকেতো ভাবছেন, সাইক্লোন একটু পরে ফরমেশন হতে যাচ্ছে বিধায় আরো শক্তি সঞ্চারিত হবে ফলে সাইক্লোন অনেক অনেক শক্তিশালী হবে। আপনাদের এই ভাবনাটি সামান্যতম ঠিকও নয়।
আবার, আমাদের আগের প্রি আপডেটের কমেন্টগুলিতে অনেকেতো লিখেছেন, এত তাপ জমা হইছে তাই সাইক্লোন হবেই এটা নিশ্চিত বলা যায়, এমন ফোরকাস্ট নাকি আপনারাও করতে পারেন। আবার অনেকেতো জানিয়েছেন, সময় যত যাবে শক্তি তত বেশী থাকবে সাগরে আর ঘূর্ণিঝড় ততবেশী শক্তিশালী হবে। তাই যেহেতু মডেল এটি ২৫/২৬ তারিখের আগে/পরে ল্যান্ডফল দেখাচ্ছে, তাই এটা অনেক বেশী শক্তিশালী হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনাদের ধারণা সঠিক নাকি ভুল?
মনে রাখবেন সাইক্লোন সংগঠিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্যারামিটারের সংখ্যা ছয়টি। যখন এই ছয়টি প্যারামিটার তার থ্রিশোল্ড ভ্যালু নিয়ে উপস্থিত থাকে তখনই কেবলমাত্র সাইক্লোন সংগঠনের সম্ভাব্যতা তৈরী হয়। এবং দীর্ঘকাল পর্যন্ত আরো কিছু প্যারামিটার সহযোগে এই ছয়টি প্যারামিটার স্বমহিমায় উপস্থিত থাকলে তখনই কেবলমাত্র সাইক্লোন শক্তিশালী হতে পারে।
একটা দুটো প্যারামিটার অনুকুলে আর কয়েকটি বা দুএকটি প্রতিকূলে থাকলে সাইক্লোন খুব বেশি শক্তিশালী হতে পারেনা। মোখা নিয়ে আলোচনার সময় এ ব্যাপারে আমরা একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম, আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন।
সাইক্লোন মোখা (২০২৩) বিশ্লেষনঃ সাইক্লোন “মোখা” আপডেট, সতর্কতা ও করণীয় !
সাগরে সিস্টেম তৈরী হওয়ার জন্য এই ছয়টি প্যারামিটারের মধ্যে এখন পাঁচটি প্যারামিটার উপস্থিত থাকার তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও একটার ব্যাপারে বেশ কিছু কনফিউশন আছে। আর এজন্যই আমরা ফরমেশন এর ডেট বলিনি।
ঘূর্ণিঝড় এর প্রাথমিক অবস্থা তৈরি ক্ষেত্রে একটা ঘূর্ণন ফোর্সের প্রয়োজন হয়। ১৫ তারিখের পর সাগরে সকল ধরনের প্যারামিটার উপস্থিত থাকলেও একটা সিস্টেম তৈরীর জন্য আর প্রয়োজন কেবল একটা ঘূর্ণন ফোর্সের। এই ফোর্স সাধারণত সরবরাহ করে রসভি,কেলভিন আর এমজেও (MJO) ওয়েভের ইন্টারএকশনের ফলে।
আরো দুএকটি কারনেও ঘূর্ণন তৈরী হতে পারে। এই কারনেই ৫ টি বিষয়ে সম্ভাব্যতা থাকা স্বত্ত্বেও আপনাদেরকে বলেছি তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে পারে, কারন আমরা তখনই ধারনা করেছিলাম যে সিস্টেম তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় ভর্টিসিটি তৈরীর একটা উপায় (তথা সেই ষষ্ঠ প্যারামিটার) এসময়কালেই চলে আসবে।
আমাদের রিসার্চ টিম আজ এ ব্যাপারে রিসার্চে সহায়তা করেছে, এবং সম্ভাব্য কোনদিন এই ধরনের একটা ফোর্সের উপস্থিতিতে ভর্টেক্স তৈরী এবং তা ইন্টেনসিফিকেশনে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে ব্যাপক ঘাটাঘাটি করেছে। বিডব্লিওটির সদস্যবর্গ নিয়মিত রিসার্চ টিমে তথ্য সরবরাহ করায় আরো বেশী সহজ হয়েছে কাজটি করার জন্য।
আমরা সাধারণত প্রায় প্রতিদিনই সাধারণ তথ্যসমূহ দেখতে থাকি এবং কোথাও সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেলেই ব্যাপক ঘাটাঘাটি শুরু করি। সেমতে এই বিষয়ে আমরা ব্যাপক ঘাটাঘাটি করেছি, অতঃপর একটা সাধারণ উপসংহারে আমরা পৌছিয়েছি। তবে আরো নিখুত তথ্য জানতে আরো দুএকটি দিন অপেক্ষা করতে হবে।
তাহলে সম্ভাব্য ঘূর্নিঝড়ের প্রাথমিক পুর্বাভাস কি?
সম্ভাব্য সিস্টেমটি ১৬ তারিখের পরেই ফরমেশন হওয়া শুরু করতে পারে এবং ১৭ থেকে ১৯ তারিখের মাঝেই এটিকে একটি সাস্পেক্ট হিসেবে ঘোষনা দেয়া হতে পারে। পরবর্তীতে এটি পরবর্তী সময়ে আসা কেলভিন ও রসভি এর ইন্টারএকশনে শক্তি পেতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড় “রিমেলে” পরিণত হতে পারে।
এটি যদি পশ্চিম-মধ্য সাগর বরাবর উত্তরে সঞ্চালিত হয় তবে এটির শক্তিমাত্রা কিছুটা বেশি হতে পারে অন্যথায় এর শক্তি তুলনামূলক কম থাকতে পারে। অপরদিকে যদি এটি ফরমেশন ও ল্যান্ডফলেও দেরি করে ফেলে তাহলে মৌসুমী বায়ু দ্বারা পূর্বমুখী বায়ু শিয়ারের মুখোমুখি হয়ে ইন্টেনসিটি আরো কমিয়ে ফেলতে পারে। তাই সম্ভাব্য ইনসেন্টিসি নিয়ে আমাদের আস্থা এখনো অনেক কম।
আমাদের প্রি আপডেট সমূহ দেখুন এখানেঃ
প্রি-আপডেট-১ , প্রি-আপডেট-২, প্রি-আপডেট-৩, প্রি-আপডেট-৪, প্রি-আপডেট-৫, প্রি-আপডেট-৬
পুনশ্চঃবাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম চেষ্টা করে সর্বোচ্চ সঠিকতার সাথে আপনাদেরকে তথ্য জানাতে। আমরা আপডেটেড থাকি, এবং আল্লাহর রহমতে আপনাদের সর্বনিম্ন ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করি। আমরা অহেতুক ভয় দেইনা, ভয় দেখাইনা। আমরা মোটামুটি নিশ্চিন্ত না হয়ে তথ্য না দিতে চেষ্টা করি, আমাদের সাথেই থাকুন। নিশ্চিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এর বিজ্ঞপ্তিসমূহ অনুসরণ করুন।
ধন্যবাদঃ BWOT Weather
ধন্যবাদ,
খালিদ হোসাইন
রিসার্চ টিম, বিডব্লিউওটি
Advertisements